ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

তিন যুগেও আলো দেখেনি চকরিয়ার তিন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র

এম আর মাহমুদ, চকরিয়া :: মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চকরিয়ার তিনটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র তিন যুগ ধরে অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এতে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে কেন্দ্রগুলো। রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার। অপরিকল্পিতভাবে কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করায় অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারহান তাজিম বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের যে উদ্দেশ্য নিয়ে অবতরণ কেন্দ্র তৈরি করেছিল, তা পূরণ হয়নি। ওই সময় নির্মিত অবতরণ কেন্দ্রগুলোর স্থান নির্ধারণ অনেকটা ভুল ছিল অথবা নির্মাণের জন্য ভূমি সংকট ছিল।
চকরিয়ার মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত রামপুর চরণদ্বীপ ও বহলতলী বদরখালী পশ্চিম বড় ভেওলা। এ অঞ্চলে উৎপাদিত চিংড়িসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ মানসম্মতভাবে প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করার জন্য মৎস্য অধিদপ্তর তিনটি মৎস্য অবতরণ ও সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ করে।

চকরিয়ার উপকূলের সুন্দরবন খ্যাত চরণদ্বীপ, রামপুর, বহলতলী মৌজায় প্রায় ২৮ হাজার একর জমির প্যারাবন উজাড় করে ১০, ১১ ও ৩০ একর বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এসব মৌজায় ব্যাপকভাবে চিংড়িসহ অন্য প্রজাতির মৎস্য চাষ শুরু হয়। এ এলাকার উৎপাদিত মাছ মানসম্মতভাবে বাজারজাত করার জন্য উদ্যোগ নেয় মৎস্য অধিদপ্তর। এ জন্য শাহারবিল ইউনিয়নের চৌয়ারফাঁড়ি, চিরিংগা ইউনিয়নের পালাকাটা, মাছঘাট ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটে মৎস্য অবতরণ ও সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ করা হয়।

মৎস্য চাষিদের দাবি, এসব কেন্দ্র মৎস্য উৎপাদন এলাকা থেকে অনেক দূরে। এ কারণে অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়ে এসব অবতরণ কেন্দ্রে চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ বিক্রি করতে আগ্রহী হননি তারা। তাই কেন্দ্রগুলো অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কেন্দ্রগুলো সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে রাষ্ট্রীয় অনেক কাজে ব্যবহার করা যেত বলে স্থানীয় মৎস্য চাষি ও জনপ্রতিনিধিদের অভিমত।

পালাকাটা মাছঘাট অবতরণ কেন্দ্রটি স্থানীয় বেলাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি মৎস্য বিভাগ থেকে ইজারা নিয়ে টমটম গ্যারেজ ও বিভিন্ন মালামালের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন। অপর দুটি কেন্দ্র তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

রামপুর চিংড়ি ঘের মালিক সমিতির সভাপতি সলিম উল্লাহ দাবি করেন, ১৯৮৬ সালের দিকে চিংড়ি চাষ শুরু হলে মৎস্য অধিদপ্তর তিনটি অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করে। দূরবর্তী এলাকায় কেন্দ্রগুলোর অবস্থান হওয়ায় ঘের এলাকায় উৎপাদিত মাছ বিক্রি করে দিচ্ছে। এ কারণে কেন্দ্রগুলো কাজে আসছে না।

চিংড়ি ও কাঁকড়া ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব বলেন, অবতরণ কেন্দ্রগুলো সংস্কার করা হলে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করা যাবে। কেন্দ্র বন্ধ রেখে নষ্ট করার কোনো কারণ নেই।

উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী চকরিয়া নিউজকে বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলো মৎস্য অধিদপ্তর চাষিদের কল্যাণের জন্য নির্মাণ করলেও স্থান নির্ধারণ ভুল থাকায় অব্যবহূত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে। এসব কেন্দ্র সংস্কার করে জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

ইউএনও জে.পি দেয়ান বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সরকারের সম্পদ। এসব কীভাবে সংস্কার করে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদিউজামান জানান, ৩টি কেন্দ্রই বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। তারা এসব রক্ষণাবেক্ষণ করছে।

পাঠকের মতামত: